মাহমুদুর রহমান
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনপূর্ব ইশতেহারে মন্ত্রিসভার সব সদস্যের সম্পদের বিবরণী বার্ষিক ভিত্তিতে জনগণকে জানানোর অঙ্গীকার করেছিল। মন্ত্রীর আসনে বসার আগে সেই হিসাব জনগণকে দিয়ে প্রতি বছর তার হ্রাস-বৃদ্ধি প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি সে সময় জনগণকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে উত্সাহিতও করেছিল। সরকারের সাড়ে তিন বছর অতিক্রান্ত প্রায়। দেশের কোনো নাগরিক আজ পর্যন্ত মন্ত্রীদের সম্পদের পরিমাণ জানতে পারেনি। কথিত দিনবদলের সনদে প্রদত্ত অন্যান্য প্রতিশ্রুতির মতো সম্পদের হিসাব দেয়ার প্রতিশ্রুতিও ভঙ্গ করতে কোনোরকম লজ্জাবোধ করেনি ক্ষমতাসীন মহল। উল্টো মন্ত্রীদের মধ্যে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে।
এরা এতটাই দুর্বিনীত হয়ে উঠেছে যে, ঘুষের টাকা বমাল ধরা পড়ার পরও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এখনও মন্ত্রী পদে রয়েছেন, দিলীপ বড়ুয়া সাড়ে তিন বছরে ছয় ছয়টি সরকারি প্লট বাগানোর পরও দাবি করছেন, প্রভাব খাটালে তিনি নাকি এতদিনে বারোটি প্লটের মালিক হতে পারতেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাধিক দুর্নীতিবাজ সরকারের সব কাহিনী বর্ণনা করতে গেলে মন্তব্য প্রতিবেদনের নির্ধারিত জায়গা শেষ হয়ে যাবে, বাজেট নিয়ে আর লেখার সুযোগ হবে না। কাজেই ওই চেষ্টা অন্য কোনো দিনের জন্য রেখে দিয়ে আজ বাজেটের মধ্যেই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখছি।
এবারের বাজেট পরিষ্কারভাবে দুর্নীতিকে উত্সাহিত করার জন্যই প্রণীত হয়েছে। গত তিন বাজেটে সরকার কালো টাকা নিয়ে নানারকম টালবাহানা করার পর শেষপর্যন্ত বিশেষ কয়েকটি খাতে সেই টাকা সাদা করার সুযোগ রেখেছিল। এবার অর্থমন্ত্রী বাজেট ঘোষণার পূর্বপর্যন্ত এ প্রসঙ্গে নিশ্চুপ থেকে তাদের এবারের শাসনামলে কালোটাকা সাদা করার সবচেয়ে ঢালাও সুযোগটি এ বছরের বাজেটে করে দিয়েছেন। আগের মতো বিশেষ খাত-টাতের আর বালাই রাখেননি। দশ শতাংশ হারে জরিমানা দিয়ে যে কোনো পরিমাণ অর্থ প্রায় সব খাতেই বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছেন। জনগণের পক্ষে এই ‘বদান্যতার’ কারণ বোঝা কঠিন নয়। আগামী বছর জুনে সরকারের সাড়ে চার বছর অতিক্রান্ত হবে। সেই সময়ের মধ্যে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলা, দলীয় পাণ্ডা নির্বিশেষে যারাই অবৈধ অর্থের মালিক হবেন, তাদের বিশেষ সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যেই বাজেটে এই আয়োজন রেখেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তাছাড়া পরবর্তী নির্বাচনের খরচ জোগানো এবং ডজন খানেক নতুন ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা মূলধন দেখাতেও পর্বতপ্রমাণ কালো টাকার প্রয়োজন পড়বে। অতএব ঢালাও দুর্নীতি জায়েজ না করে উপায় নেই। অথচ বিরোধী দলে থাকার সময় কালোটাকা সাদা করার সুযোগের বিরুদ্ধে সর্বদাই সোচ্চার থেকেছেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন তিনি বলতেন, লুটপাট জায়েজ করার জন্যই বিএনপি বাজেটে এই সুযোগটি রেখে দেয়। সেসব কথা প্রধানমন্ত্রীর হয়তো এখন মনেই পড়ে না। বোকা জনগণের হাতে কাঁচকলা ধরিয়ে তাদের মাথায় মুন্সিয়ানার সঙ্গে কাঁঠাল ভেঙে চলেছেন মহাজোটের কর্তাব্যক্তিরা। ২০০১ থেকে ২০০৬ বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় সরকারের কিছু ব্যক্তি নেহাতই চুরি-ছ্যাঁচড়ামি করেছে, এরা একেবারে ডাকাতি করে ছাড়লো। আগামী এক বছরে কালোটাকা সাদা করার অবাধ সুযোগ পেয়ে সরকারঘনিষ্ঠরা অতিকায় বাজেট থেকে যে লুটপাটের নিত্যনতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবেন, সেটি সহজেই ধারণা করা যাচ্ছে। শেখ হাসিনা তার আগের আমলে বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করে ক্ষমতা থেকে বিদায় গ্রহণ করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার সরকার প্রথম তিন বছর চ্যাম্পিয়নশিপ ধরে রাখতে পারলেও পরের দুই বছরে সেটি আমাদের হাতছাড়া হয়। প্রশাসনের সর্বত্র দুর্নীতির ভয়াবহ বিস্তার দেখে মনে হচ্ছে, এই মেয়াদেও শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সেই হারানো চ্যাম্পিয়নশিপ পুনরুদ্ধার করে তবেই ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবেন। তার সরকারের প্রতি আগাম অভিনন্দন রইল।
এবার অপচয়ের আলোচনায় আসি। রাজস্ব খাত অর্থাত্ অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় দিয়ে শুরু করা যাক। চারদলীয় জোট সরকারের শেষ বছর ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এই খাতে মোট ব্যয় হয়েছিল ৩৮০৭০ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে সেই খরচ বৃদ্ধি পেয়ে ১০৪২৩৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৬৭৩৮ কোটি টাকা। এর অর্থ হলো ৭ বছরে দেশের অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ ৯৮৬৬৮ কোটি টাকা অথবা ২.৬ গুণ। একই হিসাব আরেক রকম করেও দেখানো যেতে পারে। বেগম খালেদা জিয়ার সরকার-পরবর্তী ৭ বছরে গড়ে প্রতি বছর ৩৭ শতাংশ হারে রাজস্ব ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করি সব অর্থনীতিবিদই স্বীকার করবেন, অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি দেশের জাতীয় আয়ে (জিডিপি) কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান তো রাখেই না; বরং মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়ে দেয়। সে কারণেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১২ থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে বর্তমান অর্থবছরে দুই অংকের (১০.৯৯) মূল্যস্ফীতি হয়েছে। অথচ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ছিল মাত্র ৭ শতাংশের কাছাকাছি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও জনগণের জীবনযাত্রার মান বর্তমানের মতো নিচে নেমে যেত না, যদি রাজস্ব ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের মাথাপিছু আয়ও প্রতি বছর ৩৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেত। জনগণের নিট আয় না বেড়ে কেবল রাজস্ব ব্যয় বৃদ্ধির অর্থই হলো রাষ্ট্র পরিচালনায় সর্বব্যাপী অপচয়। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র একটি রাষ্ট্রে প্রতি বছর এত উচ্চ হারে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি অর্থনৈতিকভাবে আত্মহত্যার শামিল। মহাজোট সরকার তাদের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার ফলে বাংলাদেশকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছে যে, ভবিষ্যতের যে কোনো সরকারকে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। আমাদের অর্থনীতিতে অপচয় যে বাড়ছে, তার আরও একটি প্রমাণ হলো শতকরা হিসাবে উন্নয়ন বাজেটের ক্রমাবনতি।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে এডিপির পরিমাণ ছিল অনুন্নয়ন খাতে ব্যয়ের ৫১ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরে রাজস্ব ব্যয়ের বিপরীতে এডিপির অংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮ শতাংশে। উন্নয়ন বাজেট এবং অনুন্নয়ন বাজেটের ভারসাম্যহীনতার ফলেই জিডিপি এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ উভয় ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বর্তমান অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ০.৩৯ শতাংশ এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ০.৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বেসরকারি বিনিয়োগের ধারাবাহিক চিত্র আরও ভয়াবহ। জেনারেল মইনউদ্দিন ও ড. ফখরুদ্দীনের যৌথ সরকার যে অর্থবছরে বিদায় নিয়েছিল, সে বছর বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ১৯.৭ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র জিডিপির ১৯.০ শতাংশ। অর্থাত্ বর্তমান সরকারের আমলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে অব্যাহতভাবে নেতিবাচক প্রবণতা বিরাজ করছে এবং সাড়ে তিন বছরে জিডিপি’র ০.৭ শতাংশ কমেছে। বর্তমান অর্থবছরে বিদেশি বিনিয়োগেও একই রকম ধস নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মে মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বিদেশি বিনিয়োগ ২৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে একটি ব্যক্তিগত কাহিনী মনে পড়লো। ২০১০ সালে বন্দী অবস্থায় আমার রিমান্ড চলাকালীন টিএফআই সেলে ধরে নিয়ে চোখ বেঁধে একজন প্রশ্নকর্তা বলেছিল, আমার বিরুদ্ধে নাকি বিনিয়োগ বোর্ডে নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালীন বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জবাবে আমি বলেছিলাম, প্রথম কথা অভিযোগটি সর্বৈব মিথ্যা। কারণ ২০০৪-০৫, ২০০৫-০৬ এবং ২০০৬-০৭ অর্থবছরে সেই সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল। আর দ্বিতীয়ত বিনিয়োগ হ্রাস পেলে যদি নির্বাহী চেয়ারম্যানকে টিএফআই সেলে ধরে এনে নির্যাতন করার রীতি চালু হয়, তাহলে ভবিষ্যতে কোনো ব্যক্তিই এই দায়িত্বটি আর নিতে চাইবেন না। জানি না ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তন হলে আমার মতো করে বিনিয়োগ বোর্ডের বর্তমান নির্বাহী চেয়ারম্যানকেও টিএফআই সেলে ধরে নিয়ে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পাওয়ার জন্য কৈফিয়ত তলব করা হবে কি-না।
বাজেট বিষয়ে লিখিত আজকের মন্তব্য প্রতিবেদন ভর্তুকি, বাজেট ঘাটতি, জাতীয় সঞ্চয় এবং রফতানির অবস্থা বর্ণনা করে শেষ করব। বিএনপি আমলের শেষ বছর (২০০৫-০৬) বাজেটে মোট ভর্তুকি ও চলতি স্থানান্তর খাতে অর্থায়নের পরিমাণ ছিল ১১০৭৩ কোটি টাকা। আর সেই একই খাতে বর্তমান অর্থবছরে সরকার ৩৪৬৪২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। ছয় বছরে তিন গুণেরও অধিক ভর্তুকি দেয়ার ধারা বাংলাদেশের অর্থনীতির পক্ষে অব্যাহত রাখা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার এই যে অপচয়ের মহোত্সবের সূচনা করেছে, তার ফলে ভবিষ্যতের সরকারগুলোর পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনাই কঠিন হয়ে পড়বে। ভর্তুকির মতো বাজেট ঘাটতিতেও সরকার রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলে থাকেন, আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে একটি রাষ্ট্রে বাজেট ঘাটতি সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। শেখ হাসিনার বর্তমান মেয়াদের আগে এই ঘাটতি সর্বদাই ৫ শতাংশের অনেক নিচে অবস্থান করেছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে বাজেটে প্রাক্কলিত ঘাটতি ৪৫২০২ কোটি টাকা অতিক্রম করে প্রকৃত ব্যয় ৪৬৩২৪ কোটি টাকা হয়েছে, যা মোট দেশজ উত্পাদনের ৫.১ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫২০৫৮ কোটি টাকা, যা প্রাক্কলিত দেশজ উত্পাদনের ৫ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরকে বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ বছর বলা চলে। কারণ সর্বশেষ সংবিধান সংশোধনী (পঞ্চদশ সংশোধনী) অনুযায়ী আগামী সাধারণ নির্বাচন ২৫ অক্টোবর ২০১৩ থেকে ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ মধ্যবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে হতে হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা সহজেই ধারণা করতে পারি, সরকারের শেষ বছরেই ক্ষমতাসীনরা সর্বাধিক লুটপাটে ব্যস্ত থাকবে। সেই লুটপাটে সহায়তা করার লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটে কালোটাকা সাদা করার অবাধ সুযোগও রেখেছেন। সুতরাং, অধিক হারে দুর্নীতিজনিত ঘাটতি যে এবারও প্রাক্কলিত বরাদ্দকে ছাড়িয়ে যাবে, সেই ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য অর্থনীতির ছাত্র হওয়ার প্রয়োজন নেই।
এবার সংক্ষেপে রফতানির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা যাক। এ বছর মার্চ থেকে শুরু করে মে মাস পর্যন্ত তিন মাসে রফতানিতে ধারাবাহিক পতনের ধারা অব্যাহত আছে। গত অর্থবছরে রফতানিতে রেকর্ড ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করায় আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৬.৭-এ উন্নীত করা সম্ভব হয়েছিল। এ বছর প্রথম এগারো মাসে সেই রফতানি প্রবৃদ্ধি কমে মাত্র ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থবছরের সর্বশেষ মাস অর্থাত্ জুনের রফতানি হিসাব পাওয়া গেলে বছর শেষে রফতানি প্রবৃদ্ধি আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী বর্তমান অর্থবছরে ৪৪টি পণ্যের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের প্রধান রফতানি গন্তব্য ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা দীর্ঘায়িত হওয়ায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের রফতানি খাতে। তদুপরি বিদ্যুত্সহ অন্যান্য অবকাঠামোজনিত দুর্বলতা শিল্প খাতে উত্পাদন সমস্যাকে আরও জটিল করেছে। ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা কাটার কোনোরকম আশু সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। সব মিলে আগামী অর্থবছরেও রফতানি খাতে সুসময় ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। রফতানি হ্রাস পেলে অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে বাংলাদেশের জিডিপিও নিশ্চিতভাবেই কমে যাবে।
আজকের সর্বশেষ আলোচনা জাতীয় সঞ্চয় নিয়ে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ বছরে (২০০৭-০৮) জাতীয় সঞ্চয় ছিল জিডিপির ৩০.২ শতাংশ। বর্তমান অর্থবছরে সেই সঞ্চয় ২৯.৪ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাত্ গত চার বছরে আমাদের জাতীয় সঞ্চয় ০.৮ শতাংশ কমিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে দিনবদলের সরকার। একদিকে ভর্তুকি এবং বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি এবং অপরদিকে জাতীয় সঞ্চয় ভেঙে খাওয়ার অর্থই হলো সরকার পরিচালনায় দুর্নীতিজনিত অপচয় দারুণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং, ক্ষমতার সাড়ে তিন বছর অন্তে শেখ হাসিনার সরকার যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেশবাসীকে উপহার দিয়েছে তার সংক্ষিপ্ত সার নিম্নরূপ :
১. জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী;
২. জাতীয় সঞ্চয় বিপজ্জনক হারে কমেছে;
৩. বেসরকারি খাতে দেশি-বিদেশি উভয় বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে;
৪. রফতানি প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী;
৫. বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশ অতিক্রম করায় আর্থিক খাতে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে;
৬. ভর্তুকি বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে;
৭. সুশাসন নির্বাসনে; এবং
৮. প্রশাসনে সর্বব্যাপী দুর্নীতির বিস্তার।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আমার ধারণা, দেশের দলনিরপেক্ষ অর্থনীতিবিদরা স্বীকার করবেন, তত্কালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান দেশের অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা এনেছিলেন। বাজেট ঘাটতি এবং ভর্তুকির বিষয়ে তার রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজেও সমর্থন করতেন। ফলে মন্ত্রিসভায় সহকর্মীদের চাপকে সাইফুর রহমান নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সে সময় জিডিপি বৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় জনগণ জাতীয় আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির সুফল পেতে শুরু করেছিল। ২০০৩-০৪ অর্থবছর থেকে শুরু করে বিএনপির সর্বশেষ বছর ২০০৫-০৬ পর্যন্ত জিডিপি টানা ৬ শতাংশের ঊর্ধ্বে থেকে মূল্যস্ফীতি এক অংকে ৩ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে ওঠা-নামা করেছে। বর্তমান সরকারের আমলে জিডিপিতে তুলনামূলক বৃদ্ধি না হলেও মূল্যস্ফীতি ইতোমধ্যে দুই অংক অতিক্রম করেছে। ফলে জনগণের প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জীবনধারণ কষ্টকর হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিটি খাতে তাদের জীবনযাপনের ব্যয়ে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটেছে। লোডশেডিং না কমলেও এক বিদ্যুত্ বিলেই ব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ ২০০ শতাংশের অধিক। তুলনামূলকভাবে কম মূল্যের প্রোটিন জাতীয় খাদ্য ডিম ও ডালের মূল্য বেড়েছে যথাক্রমে ৩০০ ও ২০০ শতাংশ। বাড়িভাড়া, যানবাহনের খরচ, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির ফলে নির্ধারিত আয়ের জনসাধারণের নাভিশ্বাস উঠেছে। অবশ্য মন্ত্রী, সরকারি দলের এমপি এবং মহাজোটের নেতাকর্মীদের রাতারাতি আয় বৃদ্ধি আলাদিনের চেরাগ দ্বারা প্রাপ্ত সম্পদকেও ছাড়িয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় মহাজোটের নব্য সম্পদশালীদের কাহিনী প্রায় প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে। মন্তব্য প্রতিবেদন শেষ করার আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত অগ্রাধিকারের পাঁচটি বিষয়ের মধ্যকার ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধ’ এবং ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা’ সম্পর্কে কী প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, তার পুনরুল্লেখ করা প্রয়োজন বোধ করছি :
১.১ দ্রব্যমূল্য : দ্রব্যমূল্যের দুঃসহ চাপ প্রশমনের লক্ষ্যে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করা হবে। দেশজ উত্পাদন বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সময়মত আমদানির সুবন্দোবস্ত, বাজার পর্যবেক্ষণসহ বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মজুতদারি ও মুনাফাখোরি সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া হবে, চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে। ‘ভোক্তাদের স্বার্থে ভোগ্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ গড়ে তোলা হবে। সর্বোপরি সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য কমানো হবে ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা হবে।
২. দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা : দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে শক্তিশালী করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ক্ষমতাধরদের বার্ষিক সম্পদ বিবরণ দিতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরের ঘুষ, দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনোপার্জিত আয়, ঋণখেলাপি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কালো টাকা ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ এবং নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতি দফতরে গণঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নাগরিক সনদ উপস্থাপন করা হবে। সরকারি কর্মকাণ্ডের ব্যাপকভাবে কম্পিউটারায়ন করে দুর্নীতির পথ বন্ধ করা হবে।
আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বর্তমান বাস্তবতার যে আসমান-জমিন ফারাক, সে বিষয়ে অধিক লেখার প্রয়োজন নেই। নির্বাচন-পূর্ব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে রাষ্ট্রের সম্পদ লুণ্ঠনের যে নজির বর্তমান সরকার সৃষ্টি করেছে, জনগণের কাছে তার জবাবদিহি করার সময় আগতপ্রায়। ক্ষমতাসীনরা বিষয়টি সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল বিধায় যে কোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে। পুরনো কথার পুনরাবৃত্তি করেই বলছি, কোনো দুর্নীতিপরায়ণ, অত্যাচারী শাসকের পক্ষেই দীর্ঘদিন ধরে গণআকাঙ্ক্ষাকে দাবিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। ইনশাআল্লাহ্ এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
ই মেইল : admahmudrahman@gmail.com
এরা এতটাই দুর্বিনীত হয়ে উঠেছে যে, ঘুষের টাকা বমাল ধরা পড়ার পরও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এখনও মন্ত্রী পদে রয়েছেন, দিলীপ বড়ুয়া সাড়ে তিন বছরে ছয় ছয়টি সরকারি প্লট বাগানোর পরও দাবি করছেন, প্রভাব খাটালে তিনি নাকি এতদিনে বারোটি প্লটের মালিক হতে পারতেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাধিক দুর্নীতিবাজ সরকারের সব কাহিনী বর্ণনা করতে গেলে মন্তব্য প্রতিবেদনের নির্ধারিত জায়গা শেষ হয়ে যাবে, বাজেট নিয়ে আর লেখার সুযোগ হবে না। কাজেই ওই চেষ্টা অন্য কোনো দিনের জন্য রেখে দিয়ে আজ বাজেটের মধ্যেই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখছি।
এবারের বাজেট পরিষ্কারভাবে দুর্নীতিকে উত্সাহিত করার জন্যই প্রণীত হয়েছে। গত তিন বাজেটে সরকার কালো টাকা নিয়ে নানারকম টালবাহানা করার পর শেষপর্যন্ত বিশেষ কয়েকটি খাতে সেই টাকা সাদা করার সুযোগ রেখেছিল। এবার অর্থমন্ত্রী বাজেট ঘোষণার পূর্বপর্যন্ত এ প্রসঙ্গে নিশ্চুপ থেকে তাদের এবারের শাসনামলে কালোটাকা সাদা করার সবচেয়ে ঢালাও সুযোগটি এ বছরের বাজেটে করে দিয়েছেন। আগের মতো বিশেষ খাত-টাতের আর বালাই রাখেননি। দশ শতাংশ হারে জরিমানা দিয়ে যে কোনো পরিমাণ অর্থ প্রায় সব খাতেই বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছেন। জনগণের পক্ষে এই ‘বদান্যতার’ কারণ বোঝা কঠিন নয়। আগামী বছর জুনে সরকারের সাড়ে চার বছর অতিক্রান্ত হবে। সেই সময়ের মধ্যে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলা, দলীয় পাণ্ডা নির্বিশেষে যারাই অবৈধ অর্থের মালিক হবেন, তাদের বিশেষ সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যেই বাজেটে এই আয়োজন রেখেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তাছাড়া পরবর্তী নির্বাচনের খরচ জোগানো এবং ডজন খানেক নতুন ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা মূলধন দেখাতেও পর্বতপ্রমাণ কালো টাকার প্রয়োজন পড়বে। অতএব ঢালাও দুর্নীতি জায়েজ না করে উপায় নেই। অথচ বিরোধী দলে থাকার সময় কালোটাকা সাদা করার সুযোগের বিরুদ্ধে সর্বদাই সোচ্চার থেকেছেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন তিনি বলতেন, লুটপাট জায়েজ করার জন্যই বিএনপি বাজেটে এই সুযোগটি রেখে দেয়। সেসব কথা প্রধানমন্ত্রীর হয়তো এখন মনেই পড়ে না। বোকা জনগণের হাতে কাঁচকলা ধরিয়ে তাদের মাথায় মুন্সিয়ানার সঙ্গে কাঁঠাল ভেঙে চলেছেন মহাজোটের কর্তাব্যক্তিরা। ২০০১ থেকে ২০০৬ বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় সরকারের কিছু ব্যক্তি নেহাতই চুরি-ছ্যাঁচড়ামি করেছে, এরা একেবারে ডাকাতি করে ছাড়লো। আগামী এক বছরে কালোটাকা সাদা করার অবাধ সুযোগ পেয়ে সরকারঘনিষ্ঠরা অতিকায় বাজেট থেকে যে লুটপাটের নিত্যনতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবেন, সেটি সহজেই ধারণা করা যাচ্ছে। শেখ হাসিনা তার আগের আমলে বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করে ক্ষমতা থেকে বিদায় গ্রহণ করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার সরকার প্রথম তিন বছর চ্যাম্পিয়নশিপ ধরে রাখতে পারলেও পরের দুই বছরে সেটি আমাদের হাতছাড়া হয়। প্রশাসনের সর্বত্র দুর্নীতির ভয়াবহ বিস্তার দেখে মনে হচ্ছে, এই মেয়াদেও শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সেই হারানো চ্যাম্পিয়নশিপ পুনরুদ্ধার করে তবেই ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবেন। তার সরকারের প্রতি আগাম অভিনন্দন রইল।
এবার অপচয়ের আলোচনায় আসি। রাজস্ব খাত অর্থাত্ অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় দিয়ে শুরু করা যাক। চারদলীয় জোট সরকারের শেষ বছর ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এই খাতে মোট ব্যয় হয়েছিল ৩৮০৭০ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে সেই খরচ বৃদ্ধি পেয়ে ১০৪২৩৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৬৭৩৮ কোটি টাকা। এর অর্থ হলো ৭ বছরে দেশের অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ ৯৮৬৬৮ কোটি টাকা অথবা ২.৬ গুণ। একই হিসাব আরেক রকম করেও দেখানো যেতে পারে। বেগম খালেদা জিয়ার সরকার-পরবর্তী ৭ বছরে গড়ে প্রতি বছর ৩৭ শতাংশ হারে রাজস্ব ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করি সব অর্থনীতিবিদই স্বীকার করবেন, অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি দেশের জাতীয় আয়ে (জিডিপি) কোনো উল্লেখযোগ্য অবদান তো রাখেই না; বরং মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়ে দেয়। সে কারণেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১২ থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে বর্তমান অর্থবছরে দুই অংকের (১০.৯৯) মূল্যস্ফীতি হয়েছে। অথচ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ছিল মাত্র ৭ শতাংশের কাছাকাছি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও জনগণের জীবনযাত্রার মান বর্তমানের মতো নিচে নেমে যেত না, যদি রাজস্ব ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের মাথাপিছু আয়ও প্রতি বছর ৩৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেত। জনগণের নিট আয় না বেড়ে কেবল রাজস্ব ব্যয় বৃদ্ধির অর্থই হলো রাষ্ট্র পরিচালনায় সর্বব্যাপী অপচয়। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র একটি রাষ্ট্রে প্রতি বছর এত উচ্চ হারে অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি অর্থনৈতিকভাবে আত্মহত্যার শামিল। মহাজোট সরকার তাদের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার ফলে বাংলাদেশকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছে যে, ভবিষ্যতের যে কোনো সরকারকে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। আমাদের অর্থনীতিতে অপচয় যে বাড়ছে, তার আরও একটি প্রমাণ হলো শতকরা হিসাবে উন্নয়ন বাজেটের ক্রমাবনতি।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে এডিপির পরিমাণ ছিল অনুন্নয়ন খাতে ব্যয়ের ৫১ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরে রাজস্ব ব্যয়ের বিপরীতে এডিপির অংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮ শতাংশে। উন্নয়ন বাজেট এবং অনুন্নয়ন বাজেটের ভারসাম্যহীনতার ফলেই জিডিপি এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ উভয় ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বর্তমান অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ০.৩৯ শতাংশ এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ০.৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বেসরকারি বিনিয়োগের ধারাবাহিক চিত্র আরও ভয়াবহ। জেনারেল মইনউদ্দিন ও ড. ফখরুদ্দীনের যৌথ সরকার যে অর্থবছরে বিদায় নিয়েছিল, সে বছর বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ১৯.৭ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র জিডিপির ১৯.০ শতাংশ। অর্থাত্ বর্তমান সরকারের আমলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে অব্যাহতভাবে নেতিবাচক প্রবণতা বিরাজ করছে এবং সাড়ে তিন বছরে জিডিপি’র ০.৭ শতাংশ কমেছে। বর্তমান অর্থবছরে বিদেশি বিনিয়োগেও একই রকম ধস নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মে মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বিদেশি বিনিয়োগ ২৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে একটি ব্যক্তিগত কাহিনী মনে পড়লো। ২০১০ সালে বন্দী অবস্থায় আমার রিমান্ড চলাকালীন টিএফআই সেলে ধরে নিয়ে চোখ বেঁধে একজন প্রশ্নকর্তা বলেছিল, আমার বিরুদ্ধে নাকি বিনিয়োগ বোর্ডে নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালীন বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জবাবে আমি বলেছিলাম, প্রথম কথা অভিযোগটি সর্বৈব মিথ্যা। কারণ ২০০৪-০৫, ২০০৫-০৬ এবং ২০০৬-০৭ অর্থবছরে সেই সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল। আর দ্বিতীয়ত বিনিয়োগ হ্রাস পেলে যদি নির্বাহী চেয়ারম্যানকে টিএফআই সেলে ধরে এনে নির্যাতন করার রীতি চালু হয়, তাহলে ভবিষ্যতে কোনো ব্যক্তিই এই দায়িত্বটি আর নিতে চাইবেন না। জানি না ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তন হলে আমার মতো করে বিনিয়োগ বোর্ডের বর্তমান নির্বাহী চেয়ারম্যানকেও টিএফআই সেলে ধরে নিয়ে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পাওয়ার জন্য কৈফিয়ত তলব করা হবে কি-না।
বাজেট বিষয়ে লিখিত আজকের মন্তব্য প্রতিবেদন ভর্তুকি, বাজেট ঘাটতি, জাতীয় সঞ্চয় এবং রফতানির অবস্থা বর্ণনা করে শেষ করব। বিএনপি আমলের শেষ বছর (২০০৫-০৬) বাজেটে মোট ভর্তুকি ও চলতি স্থানান্তর খাতে অর্থায়নের পরিমাণ ছিল ১১০৭৩ কোটি টাকা। আর সেই একই খাতে বর্তমান অর্থবছরে সরকার ৩৪৬৪২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। ছয় বছরে তিন গুণেরও অধিক ভর্তুকি দেয়ার ধারা বাংলাদেশের অর্থনীতির পক্ষে অব্যাহত রাখা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। বর্তমান সরকার এই যে অপচয়ের মহোত্সবের সূচনা করেছে, তার ফলে ভবিষ্যতের সরকারগুলোর পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনাই কঠিন হয়ে পড়বে। ভর্তুকির মতো বাজেট ঘাটতিতেও সরকার রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলে থাকেন, আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে একটি রাষ্ট্রে বাজেট ঘাটতি সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। শেখ হাসিনার বর্তমান মেয়াদের আগে এই ঘাটতি সর্বদাই ৫ শতাংশের অনেক নিচে অবস্থান করেছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে বাজেটে প্রাক্কলিত ঘাটতি ৪৫২০২ কোটি টাকা অতিক্রম করে প্রকৃত ব্যয় ৪৬৩২৪ কোটি টাকা হয়েছে, যা মোট দেশজ উত্পাদনের ৫.১ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫২০৫৮ কোটি টাকা, যা প্রাক্কলিত দেশজ উত্পাদনের ৫ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরকে বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ বছর বলা চলে। কারণ সর্বশেষ সংবিধান সংশোধনী (পঞ্চদশ সংশোধনী) অনুযায়ী আগামী সাধারণ নির্বাচন ২৫ অক্টোবর ২০১৩ থেকে ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ মধ্যবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে হতে হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা সহজেই ধারণা করতে পারি, সরকারের শেষ বছরেই ক্ষমতাসীনরা সর্বাধিক লুটপাটে ব্যস্ত থাকবে। সেই লুটপাটে সহায়তা করার লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটে কালোটাকা সাদা করার অবাধ সুযোগও রেখেছেন। সুতরাং, অধিক হারে দুর্নীতিজনিত ঘাটতি যে এবারও প্রাক্কলিত বরাদ্দকে ছাড়িয়ে যাবে, সেই ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য অর্থনীতির ছাত্র হওয়ার প্রয়োজন নেই।
এবার সংক্ষেপে রফতানির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা যাক। এ বছর মার্চ থেকে শুরু করে মে মাস পর্যন্ত তিন মাসে রফতানিতে ধারাবাহিক পতনের ধারা অব্যাহত আছে। গত অর্থবছরে রফতানিতে রেকর্ড ৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করায় আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৬.৭-এ উন্নীত করা সম্ভব হয়েছিল। এ বছর প্রথম এগারো মাসে সেই রফতানি প্রবৃদ্ধি কমে মাত্র ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থবছরের সর্বশেষ মাস অর্থাত্ জুনের রফতানি হিসাব পাওয়া গেলে বছর শেষে রফতানি প্রবৃদ্ধি আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী বর্তমান অর্থবছরে ৪৪টি পণ্যের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের প্রধান রফতানি গন্তব্য ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা দীর্ঘায়িত হওয়ায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের রফতানি খাতে। তদুপরি বিদ্যুত্সহ অন্যান্য অবকাঠামোজনিত দুর্বলতা শিল্প খাতে উত্পাদন সমস্যাকে আরও জটিল করেছে। ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা কাটার কোনোরকম আশু সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। সব মিলে আগামী অর্থবছরেও রফতানি খাতে সুসময় ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। রফতানি হ্রাস পেলে অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে বাংলাদেশের জিডিপিও নিশ্চিতভাবেই কমে যাবে।
আজকের সর্বশেষ আলোচনা জাতীয় সঞ্চয় নিয়ে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ বছরে (২০০৭-০৮) জাতীয় সঞ্চয় ছিল জিডিপির ৩০.২ শতাংশ। বর্তমান অর্থবছরে সেই সঞ্চয় ২৯.৪ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাত্ গত চার বছরে আমাদের জাতীয় সঞ্চয় ০.৮ শতাংশ কমিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছে দিনবদলের সরকার। একদিকে ভর্তুকি এবং বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি এবং অপরদিকে জাতীয় সঞ্চয় ভেঙে খাওয়ার অর্থই হলো সরকার পরিচালনায় দুর্নীতিজনিত অপচয় দারুণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং, ক্ষমতার সাড়ে তিন বছর অন্তে শেখ হাসিনার সরকার যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেশবাসীকে উপহার দিয়েছে তার সংক্ষিপ্ত সার নিম্নরূপ :
১. জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী;
২. জাতীয় সঞ্চয় বিপজ্জনক হারে কমেছে;
৩. বেসরকারি খাতে দেশি-বিদেশি উভয় বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে;
৪. রফতানি প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী;
৫. বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশ অতিক্রম করায় আর্থিক খাতে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে;
৬. ভর্তুকি বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে;
৭. সুশাসন নির্বাসনে; এবং
৮. প্রশাসনে সর্বব্যাপী দুর্নীতির বিস্তার।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আমার ধারণা, দেশের দলনিরপেক্ষ অর্থনীতিবিদরা স্বীকার করবেন, তত্কালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান দেশের অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা এনেছিলেন। বাজেট ঘাটতি এবং ভর্তুকির বিষয়ে তার রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজেও সমর্থন করতেন। ফলে মন্ত্রিসভায় সহকর্মীদের চাপকে সাইফুর রহমান নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সে সময় জিডিপি বৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় জনগণ জাতীয় আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির সুফল পেতে শুরু করেছিল। ২০০৩-০৪ অর্থবছর থেকে শুরু করে বিএনপির সর্বশেষ বছর ২০০৫-০৬ পর্যন্ত জিডিপি টানা ৬ শতাংশের ঊর্ধ্বে থেকে মূল্যস্ফীতি এক অংকে ৩ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে ওঠা-নামা করেছে। বর্তমান সরকারের আমলে জিডিপিতে তুলনামূলক বৃদ্ধি না হলেও মূল্যস্ফীতি ইতোমধ্যে দুই অংক অতিক্রম করেছে। ফলে জনগণের প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জীবনধারণ কষ্টকর হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিটি খাতে তাদের জীবনযাপনের ব্যয়ে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটেছে। লোডশেডিং না কমলেও এক বিদ্যুত্ বিলেই ব্যয় বৃদ্ধির পরিমাণ ২০০ শতাংশের অধিক। তুলনামূলকভাবে কম মূল্যের প্রোটিন জাতীয় খাদ্য ডিম ও ডালের মূল্য বেড়েছে যথাক্রমে ৩০০ ও ২০০ শতাংশ। বাড়িভাড়া, যানবাহনের খরচ, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির ফলে নির্ধারিত আয়ের জনসাধারণের নাভিশ্বাস উঠেছে। অবশ্য মন্ত্রী, সরকারি দলের এমপি এবং মহাজোটের নেতাকর্মীদের রাতারাতি আয় বৃদ্ধি আলাদিনের চেরাগ দ্বারা প্রাপ্ত সম্পদকেও ছাড়িয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় মহাজোটের নব্য সম্পদশালীদের কাহিনী প্রায় প্রতিদিন প্রকাশিত হচ্ছে। মন্তব্য প্রতিবেদন শেষ করার আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত অগ্রাধিকারের পাঁচটি বিষয়ের মধ্যকার ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধ’ এবং ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা’ সম্পর্কে কী প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, তার পুনরুল্লেখ করা প্রয়োজন বোধ করছি :
১.১ দ্রব্যমূল্য : দ্রব্যমূল্যের দুঃসহ চাপ প্রশমনের লক্ষ্যে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করা হবে। দেশজ উত্পাদন বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সময়মত আমদানির সুবন্দোবস্ত, বাজার পর্যবেক্ষণসহ বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মজুতদারি ও মুনাফাখোরি সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া হবে, চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে। ‘ভোক্তাদের স্বার্থে ভোগ্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ গড়ে তোলা হবে। সর্বোপরি সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য কমানো হবে ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা হবে।
২. দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা : দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে শক্তিশালী করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ক্ষমতাধরদের বার্ষিক সম্পদ বিবরণ দিতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরের ঘুষ, দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনোপার্জিত আয়, ঋণখেলাপি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কালো টাকা ও পেশিশক্তি প্রতিরোধ এবং নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতি দফতরে গণঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নাগরিক সনদ উপস্থাপন করা হবে। সরকারি কর্মকাণ্ডের ব্যাপকভাবে কম্পিউটারায়ন করে দুর্নীতির পথ বন্ধ করা হবে।
আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বর্তমান বাস্তবতার যে আসমান-জমিন ফারাক, সে বিষয়ে অধিক লেখার প্রয়োজন নেই। নির্বাচন-পূর্ব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে রাষ্ট্রের সম্পদ লুণ্ঠনের যে নজির বর্তমান সরকার সৃষ্টি করেছে, জনগণের কাছে তার জবাবদিহি করার সময় আগতপ্রায়। ক্ষমতাসীনরা বিষয়টি সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিবহাল বিধায় যে কোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে। পুরনো কথার পুনরাবৃত্তি করেই বলছি, কোনো দুর্নীতিপরায়ণ, অত্যাচারী শাসকের পক্ষেই দীর্ঘদিন ধরে গণআকাঙ্ক্ষাকে দাবিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। ইনশাআল্লাহ্ এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
ই মেইল : admahmudrahman@gmail.com